ভেষজ পরীক্ষাকালে যেসব মৌলিক বিষয় সূমহ মেনে চলতে হবে
হোমিওপ্যাথিতে ভেষজ পরীক্ষাকাল (drug proving) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যেখানে একটি নির্দিষ্ট ভেষজ বা রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব মানবদেহে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ভেষজ পরীক্ষাকালে এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট পদার্থটি কী কী উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে এবং তা কোন রোগের চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে।
ভেষজ পরীক্ষাকালে মেনে চলার মৌলিক বিষয়সমূহ:
১. পরীক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা:
- পরীক্ষার্থীর সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা থাকা জরুরি।
- কোনো রোগ থাকলে, সেই ব্যক্তি পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত নয়।
- তার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের সময়সূচি এবং মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকতে হবে।
- পরীক্ষার্থীকে অনুকুল পরিবেশে থাকতে হবে
২. নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ওষুধ সেবন:
- পরীক্ষার্থীরা ওষুধ সেবনের আগে এবং সেবনকালে কোনো ধরনের ক্যামিক্যাল, অ্যালকোহল বা ধূমপান করা থেকে বিরত থাকবেন।
- নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবন করতে হবে এবং মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না।
- প্রতিটি ওষুধ খাওয়ার সময় ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে নথিভুক্ত করতে হবে।
- সকাল বেলা খালিপেটে ভেষজ সেবন করতে হবে
- ভেষজের ক্রিয়া শুরু হলে ভেষজ সেবন বন্ধ করতে হবে
৩. পর্যবেক্ষণ ও উপসর্গ নথিভুক্তকরণ:
- ওষুধ গ্রহণের পর শরীরে যে পরিবর্তনগুলো দেখা দেয়, তা নিয়মিতভাবে নোট করতে হবে।
- শারীরিক, মানসিক, আবেগগত ও স্বভাবগত পরিবর্তনগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
- পরীক্ষাটি নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে কোনো ভুল বা কল্পনাপ্রসূত উপসর্গ যুক্ত না হয়।
- ভেষজের যথার্থতা জানার জন্য কখনো হেটে, দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, খাওয়ার সময়, কথাতে, হাচিতে, কাশিতে কোন পরিবর্তন হয় কিনা তা গুরুত্বসহকারে জেনে নিতে হবে
৪. পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়সীমা:
- সাধারণত, একটি ওষুধের প্রভাব বোঝার জন্য নির্দিষ্ট সময় ধরে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।
- দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব জানতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে পরীক্ষাটি চালানো হতে পারে।
৫. বাহ্যিক প্রভাব ও পরিবেশগত বিষয়:
- পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারীর জীবনযাত্রা পরিবর্তন করা উচিত নয়।
- আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন কাজের কারণে যাতে পরীক্ষার ফলাফলে কোনো প্রভাব না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. পরীক্ষার গোপনীয়তা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা:
- ফলাফল প্রকাশের আগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গোপন রাখা জরুরি।
৭. বিশেষজ্ঞ ও গবেষণা দল দ্বারা পর্যবেক্ষণ:
- পরীক্ষাটি অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়া উচিত।
- যদি কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
- নারী পুরুষ উভয়ের উপর ভেষজ পরীক্ষা করতে হবে।
- ইতর প্রাণী বা অসুস্থ মানুষের উপর পরীক্ষা করা যাবে না।
এই মৌলিক নিয়মগুলি মেনে চললে হোমিওপ্যাথিক ভেষজ পরীক্ষার ফলাফল নির্ভুল ও কার্যকর হবে এবং তা চিকিৎসায় নিরাপদভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়।